ভুমিকা
আজ আমরা আপনাদের সাথে কথা বলবো ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে বর্ষায় ডেঙ্গু জ্বর দেখা যায়। এখন বর্ষাকাল। আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত সমস্যায় ভুগছে। এই সমস্যা মূলত সেপ্টেম্বরের শেষ দুই মাসে মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মানুষ বেশি আক্রন্ত হয়।
আজ আমরা আলোচনা করবো ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো নিয়ে। এটি অন্যান্য সব ভাইরাসের মতো,
লক্ষন গুলো কি কি
- ডেঙ্গু জ্বর শুরু থেকে 105 ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকে।
- মাথায় সমস্যা হওয়া।
- চোখে সমস্যা হওয়া।
- পিঠে সমস্যা হওয়া।
- কোমর ব্যথা হওয়া ইত্যাদি হাত-পায়ে নানা সমস্যা হতে পারে।
রক্ত কোথায় কোথায় থেকে বের হতে পারে।
- রক্ত দাঁত থেকে বের হওয়া শুরু হতে পারে।
- নাক থেকে রক্ত পড়তে পারে।
- মুখ থেকে রক্ত বের হতে পারে।
এটা আমরা কিভাবে বুঝব?
মাড়ি দিয়ে রক্ত গেলে সেটা আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু অনেক সময় মাড়ি কালো রক্তকণিকা হতে পারে। ব্ল্যাক ব্লাড সেল এটি জানার পর অনেক রোগীই মনে করেন রক্ত যাচ্ছে। আসলে, কালো রক্ত কোষের সাথে যে রক্ত যায় তা সাধারণত মাড়ির কালো রক্তকণিকা ।যেটা খুব দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে। পানি দিলে, আপনি সেই জায়গায় লালভাব দেখতে পারবেন। আর এটা খুব শক্তিশালী গন্ধ আছে। আপনার শরীরের অনেক জায়গায় এই দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাধারণত মাড়ির রক্তক্ষরণজনিত জ্বরের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর এটি হয়ে থাকে। কিন্তু আরেকটি সমস্যা আছে সেটা হলো মাড়ির শক সিন্ড্রোম।
মাড়ির শক সিন্ড্রোম কি?
মাড়ির শক সিন্ড্রোম হওয়ার কারণে এ বছর মানুষ বেশি এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শক সিন্ড্রোমে, রক্ত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও রোগটি খুব খারাপ হতে পারে। যার ফলে এই সমস্যার কারনে ,সেই রোগীর হাত পা ঠান্ডা হতে পারে। বা অনেক গরম হতে পারে। আর রক্তচাপ অনেকদিন হাই থাকতে পারে। এ ছাড়া শুরু থেকেই অনেক সময় হয়তো রক্তের যে কণিকার কথা বলেছি সেগুলো সাধারণ রক্তকণিকা। এগুলো ছাড়া অন্য ধরনের রক্তকণিকা থাকতে পারে। দেখা যাচ্ছে, হয়তো পানিতে রক্তের লালভাব ওঠেনি। কিন্তু একদিনেই রোগটি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অথবা রক্তের পরিমাণ কেটে যাচ্ছে এবং দেখা যাচ্ছে অনেক কমে যেতে পারে। যার মানে এটি ইমিউনিটি সিস্টেমে স্থির থাকে না।রক্তক্ষরণজনিত জ্বর শরীরে থাকলে বাইরে থেকে দেখা যায় না। আর শুরু থেকেই দীর্ঘ সময় ধরে দেখা যায় শরীরের বিভিন্ন রক্তনালীতে ডেঙ্গু জ্বর বইতে পারে যার কারণে স্ট্রোকসহ অন্যান্য রোগ হতে পারে। আমাদের ক্ষেতরে দেখা যায়, অসুখ-বিসুখ হলে মাঝে মাঝে, স্বাভাবিক ক্ষতের মতো তেমন হয় না, শরীর খারাপ লাগে না। কিন্তু শরীরটা খুব খারাপ লাগছে এমন একটা ভাব আছে।সেই রোগীরও ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত বড়দের ক্ষেতরে?
ডেঙ্গু জ্বর হলে বড়দের জন্য যা যা খাওয়া উচিত যেটার কারনে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য নিচে সেটা একটা তালিকা দেওয়া হলো,
- সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- মাল্টা,ডাবের পানি,কমলা লেবু,স্ট্রবেরি,কিউই,ডালিম,আনার, পেঁপে, এই জাতীয় ফল বেশি বেশি খেতে হবে।
- টমেটো,শসা,গাজর ইত্যাদি শাক সবজি বেশি খেতে হবে। কারন এগুলোতে জলীয় অংশ সবচেয়ে বেশি থাকে।
- এছাড়াও আপনাকে প্রতিদিন স্যুপ খেতে হবে যেমন সবজির,টমেটোর,চিকেনের, তাছাড়াও কর্নের স্যুপ খাওয়া
- এবং বেশি মসলা ওয়ালা বা চর্বি তেলযুক্ত খাবার না খাওয়াটাই ভালো
- এছাড়াও ডিম,মাছ,মাংস দুধ খেতে হবে।
শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন, করনীয় এবং প্রতিকার কি
বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের একটি বড় অংশই শিশু। শিশুরা সাধারণত তাদের শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন বা সতর্ক না হওয়ার কারণে তাদের ওপর এই রোগের প্রভাব বড়দের চাইতে আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণঃ
সাধারণত ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা কামড় দেয়ার পর সুস্থ ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এবং এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশের চার থেকে ১০ দিনের মধ্যে নানা ধরণের উপসর্গ দেখা দেয় আপনাকে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে শিশুদের জ্বর হওয়ার মানে যে সেইটা ডেঙ্গু জ্বর এমনটা ভাবার কোনই কারণ নাই ।
ডেঙ্গু রোগের প্রাথমিক কিছু লক্ষণঃ
- ডেঙ্গু হলে শিশু স্বাভাবিক চঞ্চলতা ভুলে প্রচুর কান্নাকাটি করে থাকে।
- ডেঙ্গু হলে শিশু স্বাভাবিক চঞ্চলতা ভুলে প্রচুর কান্নাকাটি করে থাকে। শিশুর ভিতর স্বাভাবিক চঞ্চলতা থাকে না যেমন শিশু নিস্তেজ হয়ে যায় যার জন্য শিশু ঝিমাতে থাকে। আর অকারনে কান্নাকাটি করে।
- শরীরে লালচে র্যাশ দেখা দিতে পারে।
- শিশুর মাথাব্যথা হতে পারে,শরীর ব্যথা, পেটে ব্যথা শিশুর শরীরে এই সমস্যা হতে পারে।
- শিশুর শরীরে পানি শূন্যতা, পাতলা পায়খানা হতে পারে।
- শিশুর চোখ লাল হওয়া শ্বাসকষ্ট বা কাশি হওয়া। এটা অ্যাফেব্রাইল স্তরে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
জ্বরের প্রকারভেদঃ
ডেঙ্গু যেহেতু ভাইরাসজনিত রোগ, তাই এই রোগে জ্বরের তাপমাত্রা সাধারণত ১০১, ১০২ ও ১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইট হতে পারে। তবে ডেঙ্গু হলেই যে তীব্র জ্বর থাকবে, এমনটা নয়। জ্বর ১০০ এর নীচে থাকা অবস্থাতেও অনেক শিশুর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। ডেঙ্গুর এই জ্বর কে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় যেমন।
১ম ফেব্রাইল ফেজঃ -
শিশুর ডেঙ্গু জ্বর দুই থেকে তিন দিন বা তার চাইতে বেশি স্থায়ী হলে।
২য় অ্যাফেব্রাইল ফেজঃ -
এসময়টাতে শিশুর আর জ্বর থাকে না।এই সময়কাল থাকে দুই-তিন দিন।
৩য় কনভালিসেন্ট ফেজঃ -
যখন শিশুর শরীরে র্যাশ ভাব দেখা যাই । এর সময়কাল থাকে চার পাঁচ দিন।
প্রয়োজন। কেননা, এই ক্রিটিকাল ফেজে শিশুর জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পর রোগটি সংকটপূর্ণ অবস্থায় চলে যেতে পারে। এই সময়ে রোগীর শরীরে প্লাজমা লিকেজ হয়ে বিভিন্ন অংশে জমা হয়ে থাকে।এ কারণে রোগীর পেট ফুলে যায় বা রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা দেখা দেয় এবং যার কারণে শিশুদের শক সিনড্রোম হতে পারে।
অ্যাফেব্রাইল ফেজে অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা
এবং জ্বর ভালো হয়ে যাওয়ার দুই তিন দিন শিশুকে সবসময় আপনার নজর দারিতে রাখবেন
পরামর্শঃ-
১. প্রথম পরামর্শ হলো, এডিস মশার উৎস ধ্বংস করতে হবে। এডিস মশা সাধারণত গৃহস্থালির পরিষ্কার স্থির পানিতে জন্মে থাকে - যেমন ফুলের টব, গাড়ির টায়ার বা ডাবের খোলে বৃষ্টির জমা পানি ইত্যাদি। তাই এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে এমন স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নষ্ট করে ফেলতে হবে। বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে৷
২. শিশুদের দিনে ও রাতে মশারির ভেতরে রাখতে হবে। বিশেষ করে নবজাতক শিশুকে সার্বক্ষণিক মশারির ভেতরে রাখা জরুরি। এছাড়া হাসপাতালে কোন শিশু যদি অন্য রোগের চিকিৎসাও নিতে আসে, তাহলে তাকেও মশারির ভেতরে রাখতে হবে। কেননা ডেঙ্গু আক্রান্ত কাউকে এডিস মশা কামড়ে পরে কোন শিশুকে কামড়ালে তার শরীরেও ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৩.আপনার বাসার শিশুরা যে সময়টাতে বাইিরে খেলাধুলা করে, সে সময় আপনি তাদের শরীরে মসকুইটো রেপেলেন্ট বা মশা নিরোধী করণ স্প্রে, ক্রিম অথবা জেল ব্যবহার করতে পারেন। যেটা আপনার বাচ্চাকে মশা থেকে সুরক্ষিত রাখবে। এছাড়াও কয়েক ঘণ্টা পর পর আবার সেই রেপেলেন্ট ব্যাবহার করতে হবে।
শিশুদের ডেঙ্গু জ্বর হলে কি কি খাবার খাওয়াবেন
ডেঙ্গু জ্বর হলে শিশুদেরকে বেশি বেশি তরল খাবার খেতে দিতে হবে যেমন. স্যুপ, ডাবের পানি, আর ফলে জুস এবং এই ফলের জুসটা অবশ্যই শিশুকে ভরা পেটে খেতে দিতে হবে। আর যেই সব ফল শিশুদের পায়খানা রং কালো করে সেসব খাবার খেতে দেওয়া যাবে না। যেমন আনার, ড্রাগন ফল, লাল শাক,লাল আংগুল ইত্যাদি।